Mallikarjuna Jyotirlingam
মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ
শ্রী ব্রহ্মারম্ভ মল্লিকার্জুন মন্দিরটি ভারতের অন্দধ্রপ্রদেশের অন্তর্গত শ্রীশৈলে অবস্থিত যা জগৎপিতা ভগবান শিব এবং মাতা পার্বতীর আরাধনা ক্ষেত্র হিসেবে প্রসিদ্ধ। ‘শৈব’ এবং ‘শাক্তদের’ নিকট এই স্থান প্রসিদ্ধ কারণ দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের একটি জ্যোতির্লিঙ্গম্ এখানে অবস্থিত এবং মাতা পার্বতীর অষ্টাদশ শক্তি পীঠের মধ্যে একটি শক্তি পীঠ এখানে অবস্থিত। ভগবান শিব এখানে মল্লিকার্জুন রূপে পূজিত হন এবং সেই পূজা হয়ে থাকে লিঙ্গম পূজার মাধ্যমে। তার সঙ্গীনী রূপে মাতা পার্বতী পূজিতা হন ব্রহ্মারম্ভা রূপে।ভারতের মধ্যে এটাই একমাত্র স্থান যা একইসাথে জ্যোতির্লিঙ্গম এবং শক্তিপীঠ হিসেবে সর্বজন বিদীত।
ঐতিহাসিকঃ
যখন মাতা পার্বতী এবং ভগবান শিব তাঁদের পুত্রের জন্য উপযুক্ত পাত্রী চয়ন করতে চান তখন গণেশ এবং কার্তিকের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধে এই নিয়ে যে কে পূর্বে এবং কে পরবর্তীতে বিবাহ করবেন।ভগবান শিব তখন একটি নিয়মে দুজনকে আবদ্ধ করলেন এই বলে , যে প্রথমে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আসতে পারবে সেই প্রথম বিবাহ করতে পারবে।এই সময় সেনানায়ক কার্তিক তার বাহন নিয়ে ব্রহ্মাণ্ড প্রদক্ষিণে বেড়িয়ে পরেন অন্যদিকে ভূপ্রদক্ষিণম্ শাস্ত্রমতে বিদিত এই যে, ব্যক্তি তার মাতা ও পিতাকে সাতবার প্রদক্ষিণ করলে তা একবার ব্রহ্মাণ্ড প্রদক্ষিণের সমতূল্য হয় সেই নিয়ম অনুসারে শ্রীগণেশ ভগবান শিব এবং মাতা পার্বতীকে সাতবার প্রদক্ষিণ করেন। ভগবান শিব বুদ্ধি যিনি জ্ঞানের, সিদ্ধি যিনি আধ্যাত্মিক ক্ষমতার, এবং রিদ্ধি যিনি উন্নতির অধিকারিণী এই তিনজনকে শ্রীগণেশের সঙ্গে বিবাহ প্রদান করেন। শ্রীকার্তিক ফিরে এসে এই ঘটনা শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে কুমারব্রহ্মচারী রূপে কৈলাস ত্যাগ করে ‘ক্রাউঞ্চ পর্বতে’ চলে যান। ভগবান শিব তাকে শান্ত করতে আসছিলেন দেখে তিনি অন্যস্থানে গমন করার চিন্তা করেন, কিন্তু পরবর্তীতে দেবতাদের অনুরোধে তিনি সেই স্থানের নিকটে অবস্থান করেন। যেখানে শিব এবং পার্বতী এসে মিলিত হয়েছিলেন সেই স্থান ‘শ্রীশৈলম’ নামে পরিচিত।
হিন্দু ঐতিহাসিকদের মতে, এই স্থানের অধিষ্ঠিত দেবতাকে মল্লিকা ফুল দ্বারা পূজা করা হয় আর তাই সেই জ্যোতির্লিঙ্গের নামকরণ হয়েছে মল্লিকার্জুন রূপে।মহাশিবরাত্রি শ্রীশৈলের মল্লিকার্জুন স্বামী মন্দিরের প্রধান উৎসব হিসেবে পালিত হয়।
ইতিহাসঃ
মন্দির সম্পর্কে এই সকল ঐতিহাসিক প্রামাণ্য তথ্যসমূহ সতবাহনা রাজবংশীয়দের(যারা চতুর্থ শতাব্দী থেকে অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করা আছে) শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে। বিজয়নগরের রাজা হরিহরণ মন্দিরের আধুনিকায়ন সম্পন্ন করেন।
স্থাপত্যকলাঃ
সম্পূর্ণ মন্দিরটি ২ হেক্টর জমির উপর স্থাপিত এবং তা থেকে বের হওয়ার জন্য চারটি গেইটওয়ে টাওয়ার রয়েছে যাদের ‘গোপুরুম’ বলা হয়ে থাকে। এই মন্দিরে অসংখ্য মণ্ডপ রয়েছে, তন্মধ্যে ‘মল্লিকার্জুন’ এবং ‘ব্রহ্মারম্ভার’ মন্ডপটি প্রধান।এই মন্দিরের অসংখ্য ঘর রয়েছে, তার মধ্যে মুখ্য মন্ডপ ঘরটি তৈরী করা হয় বিজয়নগর রাজ্যের সময়কালে। সেই মণ্ডপটি পূর্বদিক অভিমুখী। কেন্দ্রীয় মণ্ডপটি অসংখ্য স্তম্ভের দ্বারা গঠিত যেখানে নাদিকেশ্বরের বিরাট একটি মূর্তি রয়েছে।সম্পূর্ণ মন্দিরটি ১৮৩ মিটার(৬০০ ফুট) দীর্ঘ , ১৫২ মিটার(৪৯৯ ফুট) প্রশস্ত এবং ৮.৫ মিটার(২৮ফুট) উঁচু দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত। এই মন্দিরে অসংখ্য স্থাপত্যকলার নিদর্শন রয়েছে।মূকমন্ডপ, মূল মন্দিরের অগ্রভাগে অবস্থিত হল বর বড় স্তম্ভের দ্বারা। মূল মণ্ডপ যেখানে মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ অধিষ্ঠিত সেই অংশটি মন্দিরের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন যা সপ্তম শতাব্দীতে তৈরী করা হয়েছে।এখানে সহস্র লিঙ্গম্ রয়েছে যা শ্রীরামচন্দ্রের দ্বারা এবং অপর পাঁচটি লিঙ্গম পান্ডব্দের দ্বারা স্থাপিত হয়। মন্দিরের প্রথম সীমানায় কাঁচের তৈরী নটরাজের ভাস্কর্য রয়েছে।
কর্তৃপক্ষঃ
জঙ্গমা লিঙ্গায়ত পুরোহিত চেংচাস এর দ্বারা মন্দিরটি সুরক্ষা এবং পরিচালনা কার্য সম্পাদিত হয়।
ধর্মীয় প্রাধান্যঃ
দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মাধ্যমে ভগবান শিব এই মন্দিরে পূজিত হন। আঠারতম শক্তিপীঠ হিসেবে পরমেশ্বরী ব্রহ্মারম্ভার এই মঠ পরিচিত। তাই এই মন্দিরকে ‘পাদল পিত্র স্থালম’ নামক শ্রেণিভূক্ত করা হয়েছে।
শক্তিপীঠঃ
শ্রীশৈলম্ শ্রীমল্লিকার্জুন স্বামী মন্দির ১৮টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি। দক্ষ যজ্ঞে দেবীর যোগবলে দেহ আহুতি করার পর ভগবান শিবকে গৃহী করার জন্য দেবীরূপে পার্বতীর জন্ম হওয়া আবশ্যক হয়ে পরে। শক্তিপীঠের মূল উৎস এই পৌরাণিক কাহিনী। শিব যখন সতীর দেহ বহন করে চলেন তখন বিষ্ণুর চক্র দ্বারা সেই দেহ খণ্ডিত হয় এবং ভূপৃষ্ঠে সতী দেবীর মৃতদেহের পতনের কারণে আদী পরাশক্তির পবিত্র আবাসগুলি গঠিত হয়।এটা বিশ্বাস করা হয় যে, সতী দেবীর ঠোটের উপরের অংশ অর্থাৎ, ওষ্ঠ এই স্থানে পড়েছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন